"শিশুদের জন্য হ্যাঁ বলুন" পথশিশুদের কখনো অবহেলা করবেন না। সুযোগ পেলে তারাও বিশ্ব জয় করতে পারবে! পথশিশুদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন। পথশিশুদের নিজের সন্তানের মত ভাবুন, তাদের সন্মান দিন। পথশিশুরা রাস্তায় জন্ম নেয় না তারা কোন না কোন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তায় চলে আসে।-- দিদারুল ইকবাল

Tuesday, October 26, 2010

কর্মজীবী শিশুদের তোলা আলোকচিত্র নিয়ে “লিভিং-ইন-দি-আরবান-জাঙ্গাল” শীর্ষক প্রদর্শনীর উদ্বোধন


আলোকচিত্রে কর্মজীবী শিশুদের জীবনকাহিনীর প্রতিফলন
কর্মজীবী শিশুদের তোলা আলোকচিত্র নিয়ে
“লিভিং-ইন-দি-আরবান-জাঙ্গাল”

শীর্ষক প্রদর্শনীর উদ্বোধন
ইউনিসেফ ও দৃক ফটো লাইব্রেরির যৌথভাবে আজ ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে “লিভিং-ইন-দি-আরবান-জাঙ্গাল”- আলোকচিত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শ্রমজীবী শিশু” শীর্ষক একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। প্রদর্শনীর ছবিগুলো তুলেছে ২০ সুবিধাবঞ্চিত শিশু যারা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, বাস করে ইউনিসেফ-এর আর্থিক সহযোগীতায় পরিচালিত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজসেবা অধিদফতরের আওতাধিন প্রোটেকশন অব চিলড্রেন এট রিস্ক (পিকার) প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র ও অপরাজেয় বাংলাদেশ এর পরিচালিত ড্রপ-ইন-সেন্টারে। এই শিশুদের তোলা আলোকচিত্রগুলো নিয়ে আজ মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে “লিভিং-ইন-দি-আরবান-জাঙ্গাল” বই। ইউনিসেফ-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি কারেল ডি রয়, পাঠশালা- সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ফটোগ্রাফি-এর অধ্যক্ষ শহীদ আলম এবং টেলিনর বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ম্যানেজার পার এরিক হিল্যান্ড এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শ্রমজীবি ২০জন শিশু আলোকচিত্রিও এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এছাড়া পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ইকবাল আহমদ, অপরাজেয় বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোস্তাফা রহমানসহ সংস্থার অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মীবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণীর অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো ঢাকা ও বরিশালে বসবাসকারী শ্রমজীবী শিশুদের আলোকচিত্রের মাধ্যমে তাদের নিজেদের কাহিনী তুলে ধরতে উৎসাহিত করা। এই প্রদর্শনী শিশুশ্রমের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাকে পরাভূত করার জন্য শিশুশ্রম বিরোধী কর্মাভিযানের অংশ বিশেষ। ইউনিসেফ নরওয়ের জাতীয় কমিটির মাধ্যমে টেলিনর এই কাজে অর্থায়ন করছে।





ইউনিসেফ প্রতিনিধি কারেল ডি রয় তার বক্তব্যে বলেন, “এসব শিশুকে প্রায়ই সমাজের উচ্ছিষ্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি বলেন, ইউনিসেফ বিশ্বাস করে যে, শ্রমজীবী শিশুদের প্রতি এই সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের পথে প্রথম পদক্ষেপ হলো শিশুদেরকে জনসমক্ষে নিজেদের প্রকাশ করার সুযোগ করে দেওয়া; তাদের অনুভূতি, ধ্যান-ধারণা ও সৃজনশীলতাকে অনুধাবন এবং প্রশংসা করা। তিনি আরো বলেন, শিশু অধিকার সনদের ধারা ১২: শিশুদের অংশগ্রহণ ও মতামত প্রকাশের অধিকার- এই ধারাকে বাস্তবায়নে আমাদের অঙ্গিকারের প্রতিফলন আজকের অনুষ্ঠান। ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী ২০জন কিশোর-কিশোরীকে ঢাকা ও বরিশালে পাঁচ দিনের এক আলোকচিত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এরা হলো ঢাকা থেকে পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের ড্রপ-ইন-সেন্টারের শিশু মো:ফয়সাল, মো:ফরিদ, মো:কাদের হোসেন, রাফিদা আক্তার, সীমা আক্তার, লাবনী আক্তার, শাহিন আলম, মো:রনি, লাকী আক্তার ও পিংকী আক্তার এবং বরিশাল থেকে অপরাজেয় বাংলাদেশের ড্রপ-ইন-সেন্টারের শিশু শাওলিন আক্তার, রনি হোসেন, সাথী আক্তার, চাঁদনী আক্তার, মো:রিপন, মো:মহসিন হোসেন, মৌসুমী আক্তার, সালমা আক্তার, দুলাল হোসেন ও মনোজ বাড়ই। এক সপ্তাহের জন্য তাদের প্রত্যেককে একটি করে ডিজিটাল ক্যামেরা দেওয়া হয়। এই এক সপ্তাহে তারা ২৭ হাজার ৬ শত ৭১টি ছবি তোলে। পরে তারা এই ছবি থেকে ছবি নির্বাচন, ছবি সম্পাদনা ও ছবির ক্যাপশন তৈরী করে।






পাঠশালা- সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ফটোগ্রাফি-এর অধ্যক্ষ শহীদ আলম তার বক্তব্যে বলেন, আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে “আরবান জাঙ্গাল”-এর বিভিন্ন দৃশ্য ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে শহরের রাস্তার বিষয়বস্তু, কঠিন পরিবেশে বসবাসকারী শিশু-কিশোরদের অবস্থা, কাজ করতে বাধ্য হওয়া শিশুদের ছবি। একই সাথে ছবিগুলো থেকে এসব শিশুর মনোজগতের একটি ধারণাও লাভ করা যায়: তাদের আনন্দ, তাদের বেদনা, তাদের স্বপ্ন। কেউ কেউ তাদের ফেলে আসা পরিচিত পরিবেশে ফিরে গিয়েছে ছবি তুলতে। যেমন, শাহীন ফিরে গিয়েছে কাওরান বাজারে যেখানে সে গৃহকর্তার বাড়ী থেকে বাধ্য হয়ে পালিয়ে গিয়ে দুই মাস ভিক্ষা করে জীবন কাটিয়েছে। শহীদ আলম আলোকচিত্রগুলোর মান দেখে বলেন; “যেসব ছবি তারা তুলেছে সেগুলো তাদের মনোবলের সঙ্গে খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ”। তারা সত্যিকার পরিণত মন ও শিল্পবোধের পরিচয় দিয়েছে। এইসব শিশু-কিশোর সাধারণভাবে পরিচিত পরিবেশে অসাধারণ, প্রতীকি ও একান্ত ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ছবি তুলেছে, যেন পাকা সাংবাদিকের দক্ষতা নিয়ে। গৎবাঁধা শিক্ষা থেকে লাভ করা শিল্পবোধ থেকে মুক্ত কয়েকজন কিশোর কিশোরী তাদের কাজে যে স্বাধীনতা দেখিয়েছে তা ‘সুশিক্ষিত’ অনেক চিত্রশিল্পী অনেক আগেই হারিয়ে বসেছেন। এ হলো স্বতস্ফূর্ততারই প্রকাশ।
উল্লেখ্য প্রদর্শনী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের আলোকচিত্রি শিশু শাহীন আলম ও পিংকী আক্তার এবং বরিশাল থেকে অপরাজেয় বাংলাদেশের আলোকচিত্রি শিশু মৌসুমী আক্তার তাদের ফটোগ্রাফী প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে।
ইউনিসেফ-এর সহযোগীতায় পরিচালিত শিশু-কিশোরদের সুরক্ষা প্রকল্পের সদস্য হলো এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী সকলে। এটা বাস্তবায়িত হচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে। ইউনিসেফ ঝুকিঁসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের সুরক্ষা প্রকল্পের (পিকার) অধীনে এদেরকে সুরক্ষা ও সহযোগিতাদানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
ঢাকায় উদ্বোধনের পর এই প্রদর্শনী নভেম্বরের ১ তারিখ পর্যন্ত দৃক গ্যালারীতে চলবে। এরপর এই প্রদর্শনী যাবে বরিশাল যা উদ্বোধন করা হবে ৫ নভেম্বর-২০১০। রিক্সা ভ্যানে করে ঢাকাতেও ভ্রাম্যমান প্রদর্শনী হবে এছাড়া বরিশালে ভ্রাম্যমান প্রদর্শনী হবে নৌকায়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ওয়েব সাইটে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। ওয়েবসাইটটিতে আলোকচিত্রগুলোর একটি গ্যালারী করা হয়েছে এবং সেখানে প্রকল্প সম্পর্কে বিশদ বর্ণনাও রয়েছে। ২৬ অক্টোবর, মঙ্গলবার থেকে ওয়েবসাইটে আলোকচিত্র সম্পর্কিত বিবরণ পাওয়া যাবে।


প্রদর্শনী সূচী:
ঢাকা: দৃক গ্যালারী, ধানমন্ডি; ২৬ অক্টোবর-১ নভেম্বর; প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত

বরিশাল: অশ্বিনী কুমার হল, সদর রোড; ৫-১২ নভেম্বর; প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত

No comments:

Post a Comment